🧾 সারচার্জ কী এবং কাদের উপর এটি প্রযোজ্য?
আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকলে ব্যক্তিকে তার স্বাভাবিক আয়কর ছাড়াও অতিরিক্ত কর অর্থাৎ সারচার্জ দিতে হয়। এই সারচার্জ মূলত সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী ধার্য হয়।
আইনের ধারা ১৬৭ অনুযায়ী, যদি কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত নিদিষ্ট সম্পদের মূল্য নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে, তবে তাকে অতিরিক্ত হারে কর দিতে হয়, যা সারচার্জ নামে পরিচিত।
📊 সম্পদের ভিত্তিতে সারচার্জের হার
নীচের টেবিলটিতে বিভিন্ন স্তরের নিট সম্পদের উপর কত শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপিত হবে তা তুলে ধরা হয়েছে:
সম্পদের মূল্যমান | সারচার্জের হার |
(ক) নিট সম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত | ০% |
(খ) নিট সম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করলে, কিন্তু ১০ কোটি টাকার বেশি না হলে; অথবা একটি মোটর গাড়ি বা ৮,০০০ বর্গফুটের বেশি আবাসিক সম্পত্তি থাকলে | ১০% |
(গ) নিট সম্পদের মূল্যমান ১০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে, কিন্তু ২০ কোটি টাকার বেশি না হলে | ২০% |
(ঘ) নিট সম্পদের মূল্যমান ২০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে, কিন্তু ৫০ কোটি টাকার বেশি না হলে | ৩০% |
(ঙ) নিট সম্পদের মূল্যমান ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে | ৩৫% |
🏠 সম্পদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
আইন অনুসারে “সম্পদ” বলতে বোঝানো হয়েছে করদাতার আয়কর বিবরণীতে উল্লেখিত সমস্ত সম্পত্তি ও দায়ের মধ্যে নিট পরিমাণ (পরিসম্পদ – দায়)।
🔹 নিট সম্পদের মূল্য নির্ধারণে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
১. পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী অনুযায়ী প্রদর্শিত নিট সম্পদের মূল্য।
২. মোটরগাড়ি বলতে বাস, মিনিবাস, কোস্টার, প্রাইভেট কার, জিপ, ট্রাক, ট্যাংকার, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ সকল ধরণের যানবাহনকে বোঝানো হয়েছে।
🚭 অতিরিক্ত করের বিষয়
তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী করদাতাদের ক্ষেত্রে (যেমন: সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল ইত্যাদি), উৎপাদনের উপর ২.৫% হারে সারচার্জ আরোপ করা হবে।

উদাহরণ
জনাব রহমান একজন করদাতা, যার নিট সম্পদের মূল্য ১২ কোটি টাকা। আয়কর আইন, ২০২৫ অনুযায়ী, তার সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৩০ কোটি টাকার কম হওয়ায়, তাকে তার নির্ধারিত করের উপর অতিরিক্ত ২০% হারে সারচার্জ প্রদান করতে হবে। ধরুন, তার মোট করযোগ্য আয় অনুযায়ী হিসাব করা আয়কর ১০ লাখ টাকা। এখন এই ১০ লাখ টাকার উপর ২০% হারে সারচার্জ আরোপ করা হবে, অর্থাৎ তাকে অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হবে। ফলে তার মোট কর হবে ১২ লাখ টাকা (১০ লাখ আয়কর + ২ লাখ সারচার্জ)।
এইভাবে সরকার উচ্চ সম্পদের অধিকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করে, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং আর্থিক বৈষম্য কিছুটা হ্রাস করতে সাহায্য করে। সারচার্জ মূলত ধনী করদাতাদের ওপর আরোপিত একটি অতিরিক্ত কর।
✍️ উপসংহার
সারচার্জ হলো সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী ধার্য একটি অতিরিক্ত কর। এটি উচ্চ সম্পদের করদাতাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, যাতে করে কর কাঠামোতে সাম্য বজায় থাকে। তাই আয়কর দাখিলের সময় নিজের নিট সম্পদের হিসাব সঠিকভাবে উপস্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।